Saturday, October 15, 2022

 আজ ১৬ই অক্টোবর। আজ আমার মায়ের চলে যাবার দিন৷ প্রতিবার কিছু না ক

আকাশপ্রদীপ

কার্তিক মাস পড়ে গেল প্রায়।  রোদটাও তেমন গায়ে লাগছেনা আর। আমাদের একতলার ফ্লাটে এই সময় রোদ আসে। নির্দিষ্ট জায়গা আছে তার। বেশিক্ষন থাকেও না। একটুখানি দেখা দিয়েই পালায় সামনের জারুল গাছের গায়ে। অনেকক্ষন থাকে ওখানে। বেশ কিছু চেনা অচেনা পাখীও আসে এই সময়। এরা আগেও আসতো কিন্তু আমি দেখতে পেতাম না। অবসর জীবনে দেখি।


আমাদের ফ্লাটের সামনে অনেকটা ফাঁকা জায়গা। সেখানে পাড়ার কুকুরগুলো রোদ পোয়াতে শুরু করে দিয়েছে এখন থেকেই। সামনের ফ্লাটের তিনতলায় প্রচুর পায়রা থাকে। সারাদিন একটা অদ্ভুত আওয়াজ করে মুখে। বিশেষ করে নির্জন দুপুরে ওদের সেই নিভৃত আলাপ অন্য মাত্রা আনে আবহতে। আমাদের আবাসনে এখন ফেরিওয়ালা ঢোকে না। মাঝে মাঝে বড় রাস্তা থেকে শুনতে পাই তাদের অদ্ভুত ডাক।


অন্য জায়গার কথা বলতে পারবো না কিন্তু আমরা যারা উত্তর কলকাতায় জন্মেছি, বড় হয়েছি তাদের কাছে কার্তিক মাস হল আকাশপ্রদীপ দেবার মাস। প্রত্যেক বাড়ির ছাদে বিভিন্ন রঙের আকাশপ্রদীপ জ্বলতো।  একটা বাঁশের লগাকে উঁচু করে বেঁধে দেওয়া হত চিলে কোঠার ছাদের মাথায়। তার ওপরে বিভিন্ন রঙের বাল্ব লাগিয়ে দেওয়া হত। তখন চাইনিজ আলো ছিল না। অনেক সময় সাদা বালবে রঙ্গীন কাগজ লাগানো হত। সে এক মায়াময় পরিবেশ। অনেক বাড়িতে আবার মাটীর প্রদীপ দেওয়া হত বাড়ির বাইরে। ওই যাদের ছাদ ছিল না তারা দিতেন। 


এ সব ব্যাপারে আমার শিক্ষক ছিলেন মা। আকাশপ্রদীপ কেন?  মা বলতেন এই সময় আমাদের পিতৃপুরুষেরা দেখতে আসেন আমরা কেমন আছি।  তাদের পথা চেনার জন্যেই আকাশপ্রদীপ জ্বালিয়ে রাখি আমরা।  মিথ??? তাই হবে। তবে সেই বয়েসে মা ভুল বলছেন ভাবতেই পারতাম না।  


কাল বড় রাস্তা দিয়ে ভিলায় ঢুকছি।  রাত্তির এগারোটা হবে।  একটু এগিয়েই আমাদের কেয়ারটেকারের ঘর।  একটা জমাট সুন্দর গন্ধ পেলাম। দেখি ওদের বাড়ির পাশের শিউলি গাছটা সাদা হয়ে গেছে শিউলি ফুলে।অপুর্ব গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। প্রকৃতির নিজস্ব সুবাস!! ডানদিকে বাঁক নিলাম। বারোয়ারী জলের কলটাকে জড়িয়ে ধরে বেড়ে উঠেছে ছাতিম গাছটা।  সেটাও ফুলে ফুলে ভরা। হাওয়া ছিল না কাল। গন্ধটা জমাট বেঁধে আছে সেখানেও। 


একতলায় থাকি আমরা। অনেক আগে যখন আমরা একতলার ভাড়া বাড়িতে থাকতাম তখন মা রাস্তার ধারের জানলায় মাটির প্রদীপ রেখে দিতেন হেমন্তকালে। আমাদের এই ফ্লাটে দুটো বড় বারান্দা আছে। সেখানেই কয়েকদিন পর  সন্ধে থেকে প্রদীপ জ্বালাতে বলেছি শম্পাকে। শেষ বয়েসে আর একবার সেই মিথই না হয় বিশ্বাস করি।


এমন শিউলি- ছাতিমের গন্ধ....। আকাশপ্রদীপ....। মা কি একবার আসবেন না তার ছোটছেলে কেমন আছে দেখতে? মেজদি? দাদা? বাবা কুঁড়ে মানুষ,  আসবেন না। খবর নিয়ে নেবেন মা- দাদা- মেজদির কাছে। তবু ওই তিনজন এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে গেলেই জন্মসার্থক আমার।  হোক না সে আমার ঘুমের মধ্যেই। সকালবেলা মাটিতে পড়ে থাকা শিউলি ফুল জানিয়ে দেবে ওঁরা এসেছিলেন । 


হেমন্তকাল বিষণ্ণতা আনে। কার্তিক মাস আনে আকাশপ্রদীপ । 

বাস্তবে না হোক স্মৃতিতে ফিরে ফিরে আসেন মা, বাবা,  দাদা, মেজদি, ছোড়দা এমনকি ছোটবোনটাও। 


তাই বা কম কিসের?


আজ ষোলই অক্টোবর


১৯৮০ সালে আজ ছিল সপ্তমী।সেদিন এই সময়েই মা. ........।

Friday, March 6, 2015

Bimochan Bhattacharya - হরিদাস পাল

Guruchandali -- Bangla eZine Magazine WebZine and something else... Bimochan Bhat

Bimochan Bhattacharya updated his status.
সমীর এর কথা

অনেক , অনেক দিন পর দেখলাম ওকে I ওকে মানে সমীর কে,আমার ওকে চিনতে এক মিনিট ও লাগেনি - আশ্চর্য্য , এই প্রায় বত্রিশ বছর পরও আমি ওকে চিনতে পারছি এক মুহুর্তে কিন্তু ও পারছেনা I একটা একাউন্ট খুলতে এসেছিল ও আমাদের ব্যাঙ্ক এ, আমি ওকে বলে দিচ্ছিলাম কি কি ডকুমেন্টস লাগবে এক্যাউন্ট খুলত।ধব ধবে সাদা পাজামা -পাঞ্জাবি পরা ,গাড়ির চাবিটা আর দুটো মোবাইল আমার টেবিল এ রেখে ও শুনছিল আমার কথা , আর আমি ফিরে যাচ্ছিলাম অতীতে I একটা কথা আমার অনেক সময় মনে হয় , স্মৃতি এত দ্রুত , এমন ডিটেলে আমাদের কাছে কি করে ফিরে আসে এক লহমায়? আমরা তো কত কিছুই ভুলে যাই,স্মৃতির তো কোনদিন ভুল হয়না পুরনো কথা মনে করিয়ে দিতে I ওর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই কিন্তু স্মৃতি আমাকে ডিটেলে মনে করিয়ে দিচ্ছিল ওকে প্রথম দেখার দিন,তার পরবর্তী সময় এবং ওর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার কথা I কিন্তু ও আমায় চিনতে পারছেনা কেন?
ষাট সালের মাঝামাঝি,আমরা সদ্য কলেজে ঢুকেছি,তখন এবং ঢুকেই যেটা করতে শুরু করলাম সেটা হলো রাজনীতি, আমাদের রাজনীতির হাতেখড়ি হলো ওই সময়,আমরা পড়তাম সিটি কলেজে , আমাদের রাজনীতির ক্লাস শ্রদ্ধ্যানন্দ পার্ক এ ,বড় বড় নেতারা যখন আমাদের "কমরেড" বলে সম্মোধন করতেন ,কি যে আলোড়ন হত শরীরে তা লিখে বোঝানো যাবেনা , এই রকম একটা ক্লাস এই আমার প্রথম আলাপ সমীর এর সাথে I আমার ই বয়েসী একটা ছেলে,একমুখভর্তি পাতলা দাড়ি,মোটা ফ্রেমের চশমা,পাজামা পাঞ্জাবি পরা , কাঁধে একটা ঝোলা, প্রথম দেখে পেছনপাকা বলে মনে হলেও ভুলটা ভাঙ্গলো একটু পরেই,নেতা বললেন যে ওর নাম সমীর মুস্তাফি ,পড়ে সেন্ট পলস কলেজে, ওই আমাদের ক্লাস নেবে আজ I আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনলাম ওর বক্তব্য I আজ ও মনে পড়ে মার্ক্সিজিম নিয়ে ওর সেই বিশ্লেষণ , এত ভালো বিশ্লেষণ পরবর্তী জীবনে আর কারো কাছে শুনিনি I ব্যাস সমীর কে আমাদের ভালো লেগে গেল , ও আমাদের কলেজেই বেশিরভাগ সময় থাকত , ওর মুখেই প্রথম শুনি , হেই সামালো ধান , জীবনানন্দের কবিতা , নিজেও দারুন কবিতা লিখত ও,"আমার সকাল হারিয়ে গাছে হাজার রাতের ভিড়ে", তখন ও যে কথাগুলো বলত এখনো তা আমার কানে বাজেI কিন্তু ও চিনতে পারছেনা কেন আমায়?ওর দু একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়েই আমি আবার স্মৃতির খপ্পরে....
প্রি- ইউ পাস করলাম কোনো রকমে,ও কিন্তু বেশ ভালো ভাবে পাস করে এসে ভর্তি হলো আমাদের কলেজে , ব্যাস আর আমাদের পায় কে?আমরা কজন সব সময় ওরসঙ্গে I কফি হাউস , ময়দান সব জায়গায় আমরা এক সঙ্গে , ওর এক প্রেমিকা ও ছিল, থাকাটাই স্বাভাবিক ছিল , অসম্ভব মেধাসম্পন্ন একটি মেয়ে যে পড়াশোনায় অত্যন্ত ভালো ছিল , কিন্তু তাকে ও সময় ই দিতে পারত না , তবে আমাদের সঙ্গে আলাপ ছিল নীলার I কিন্তু সময় পাল্টাতে লাগলো দ্রুত সেই সঙ্গে সমীর ও. মাত্র এক বা দেড় বছরের মধ্যে রাজনীতিতে এলো নতুন জোয়ার , সমীর এর সঙ্গে অনেক নতুন ছেলেদের দেখতে লাগলাম ,একদিন ও আমাদের বলল কে কানু সান্যাল মনুমেন্ট এর সামনে এক নতুন দলের প্রতিষ্ঠা করবেন আমরা যাব কিনা ?ততদিনে আমরা ওর মুখ থেকেই জেনেছি চারু মজুমদার , জঙ্গল সাঁওতাল , সরোজ দত্ত দের নাম , গেলাম ওর সঙ্গে ,সাক্ষী হয়ে থাকলাম সেই ঐতিহাসিক মুহুর্তের , জন্ম হলো "মার্কসবাদী -লেনিনবাদী" পার্টির I কিন্তু ভীষণ গন্ডগোল হলো সেদিন -ইঁটের ঘায়ে আমার মাথা ফেটে গেল (এখনো দাগ টা আছে), কোনো রকমে বাড়ি পালিয়ে এলাম মাথায় ব্যান্ডেজ করে, বাড়িতে বললাম পড়ে গিয়ে মাথা ফেটেছে I
সমীর কিন্তু একেবারে অন্য ছেলে হয়ে গেল ওই ঘটনার পর ,কলেজে আসা আসতে আসতে বন্ধ করে দিল,শেষ যেদিন ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, কি রকম ভীত- সন্ত্রস্ত লাগছিল ওকে I ওর ব্যাগ এ আমি একটা পিস্তল দেখেছিলাম সেদিন ,ওই দেখিয়েছিল- বলেছিল, আমরা যেন ওর সঙ্গে দেখা না করি,ওকে পুলিশ খুজছে I

তারপর এলো সেই ভয়ংকর সময়,সত্তরের দশক,সমীর মুস্তাফি তখন ছাত্রনেতা হিসেবে প্রথম সারীর- একদিন কাগজে দেখলাম পুলিশে ধরা পড়েছে ও I অনেক ভেবে চিনতে একদিন গেলাম ওর বাড়িতে , ওর বাবা মা দুজনেই খুব ই স্নেহ করতেন আমাকে,ওর কথা জিগ্গেশ করতে ওর বাবা বললেন যে ওকে মিসা আইনে ধরা হয়েছে তাই ও বেল পাবেনা , শিগগির ই ওকে মাদ্রাস জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে I

এরপর আমার সঙ্গে ওর দেখা হয়েছিল আঠাত্তর সালের মাঝামাঝি I কিছুদিন আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে,বলল প্রথম দিকে প্রচন্ড মারধর করেছিল , পরের দিকে গা সওয়া হয়ে গেছিল,ওর মুখে পুলিশী নির্যাতনের কথা শুনে আমি আঁতকে উঠেছিলাম,ও কিন্তু হাসছিল I সেটাই ছিল আমার সঙ্গে সমীর এর শেষ দেখা I
আজ এই দু হাজার নয় সালে আবার সেই সমীর . আমার সামনে বসে , আমায় চিনতে পারছেনা I আমার একটা কার্ড দিলাম ওকে , বললাম কোনো দরকার হলে আমায় ফোন করবেন, কার্ড টা দেখল ও,আমার চোখের দিকে সরাসরি তাকালো, একটু যেন হাসিওর চোখে? বলল-বাসু ?আমি হাঁ বলাতে বলল - আমাকে কি চিনতে পেরেছিস?
বললাম -চিনতে তো প্রথম দেখাতেই পেরেছি , কিন্তু তুই আমাকে চিনতে পারছিস না দেখে কিছু বলিনি I লক্ষ্য করে দেখলাম যে ওর হাতে চারটে আংটি, আমাকে জিগ্গেশ করতে হলো না , ওই বলল - আমি এখন কলকাতার খুব নামী লোকরে বাসু, সমীর মুস্তাফি মারা গেছে ,আমি এখন আচার্য্য ভার্গভ I তোর বাঙ্কের পাশের নামী সোনার দোকানটায় বসব সপ্তায় দু দিন , সেই ডিল টাই ফাইনাল করতে এসেছিলাম , ওখানে বসলে পাশের ব্যাঙ্কে একটা একাউন্ট তো খুলতেই হয় , কি বলিস ? ডিল ফাইনাল হয়ে গেল , সামনের সপ্তাহ থেকে দু দিন বসব সপ্তাহে I আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না ,আমার স্বপ্নের নায়ক , এক সময়ের বিখ্যাত নেতা সমীর মুস্তাফি-সে কিনা এখনকার বিখ্যাত জ্যোতিষী আচার্য্য ভার্গভ ?
আমার মনের কথাটা বুঝতে সমীর মুস্তফির বেশি সময় লাগলো না I বলল -খুব একটা তফাত আছে বলে তোর মনে হয় ? দুটোই তো স্বপ্ন বেচা ? সেই সময় আমাদের স্বপ্ন বেচেছিল কয়েকজন সৎ মানুষ ,সেই স্বপ্ন টা আমরা বেচতে পারিনি --আমাদের ব্যর্থতা - কিন্তু এই স্বপ্ন টা কিনতে লোকে সকাল থেকে নাম লেখায় I

টেবিল থেকে গাড়ির চাবি,মোবাইল দুটো তুলে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে চলে গেল সমীর মুস্তাফি-না ভুল বললাম --আচার্য্য ভার্গাভ I

(আমার একটি প্রকাশিত গল্প । ২০০৯ সালে লেখা 
tacharya - হরিদাস পাল

Thursday, March 18, 2010

এরপর আমার সঙ্গে ওর দেখা হয়েছিল আঠাত্তর সালের মাঝামাঝি I কিছুদিন আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে,বলল প্রথম দিকে প্রচন্ড মারধর করেছিল , পরের দিকে গা সওয়া হয়ে গেছিল,ওর মুখে পুলিশী নির্যাতনের কথা শুনে আমি আঁতকে উঠেছিলাম,ও কিন্তু হাসছিল I সেটাই ছিল আমার সঙ্গে সমীর এর শেষ দেখা I
আজ এই দু হাজার নয় সালে আবার সেই সমীর . আমার সামনে বসে , আমায় চিনতে পারছেনা I আমার একটা কার্ড দিলাম ওকে , বললাম কোনো দরকার হলে আমায় ফোন করবেন, কার্ড টা দেখল ও,আমার চোখের দিকে সরাসরি তাকালো, একটু যেন হাসিওর চোখে? বলল-বাসু ?আমি হাঁ বলাতে বলল - আমাকে কি চিনতে পেরেছিস?
বললাম -চিনতে তো প্রথম দেখাতেই পেরেছি , কিন্তু তুই আমাকে চিনতে পারছিস না দেখে কিছু বলিনি I লক্ষ্য করে দেখলাম যে ওর হাতে চারটে আংটি, আমাকে জিগ্গেশ করতে হলো না , ওই বলল - আমি এখন কলকাতার খুব নামী লোকরে বসু, সমীর মুস্তাফি মারা গেছে ,আমি এখন আচার্য্য ভার্গভ I তোর বাঙ্কের পাশের নামী সোনার দোকানটায় বসব সপ্তায় দু দিন , সেই ডিল তাই final করতে এসেছিলাম , টা ওখানে বসলে পাশের ব্যাঙ্কে একটা একাউন্ট তো খুলতেই হয় , কি বলিস ? ডিল final হয়ে গেল , সামনের সপ্তাহ থেকে দু দিন বসব সপ্তাহে I আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না ,আমার স্বপ্নের নায়ক , এক সময়ের বিখ্যাত নেতা সমীর মুস্তাফি-সে কিনা এখনকার বিখ্যাত জ্যোতিষী আচার্য্য ভার্গভ ?
আমার মনের কথাটা বুঝতে সমীর মুস্তফির বেশি সময় লাগলো না I বলল -খুব একটা তফাত আছে বলে তোর মনে হয় ? দুটোই তো স্বপ্ন বেচা ? সেই সময় আমাদের স্বপ্ন বেচেছিল কএকজন মানুষ ,সেই স্বপ্ন টা আমরা বেচতে পারিনি --আমাদের ব্যর্থতা - কিন্তু এই স্বপ্ন টা কিনতে লোকে সকাল থেকে নাম লেখায় I

টেবিল থেকে গাড়ির চাবি,মোবাইল দুটো তুলে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে চলে গেল সমীর মুস্তাফি-না ভুল বললাম --আচার্য্য ভার্গাভ

সমীর কে - শেষ দেখা

প্রি- ইউ পাস করলাম কোনো রকমে,ও কিন্তু বেশ ভালো ভাবে পাস করে এসে ভর্তি হলো আমাদের কলেজে , ব্যাস আর আমাদের পায় কে?আমরা কজন সব সময় ওরসঙ্গে I কফি হাউস , ময়দান সব জায়গায় আমরা এক সঙ্গে , ওর এক প্রেমিকা ও ছিল, থাকাটাই স্বাভাবিক ছিল , অসম্ভব মেধাসম্পন্ন একটি মেয়ে যে পড়াশোনায় অত্যন্ত ভালো ছিল , কিন্তু তাকে ও সময় ই দিতে পারত না , তবে আমাদের সঙ্গে আলাপ ছিল নীলার I কিন্তু সময় পাল্টাতে লাগলো দ্রুত সেই সঙ্গে সমীর ও. মাত্র এক বা দেড় বছরের মধ্যে রাজনীতিতে এলো নতুন জোয়ার , সমীর এর সঙ্গে অনেক নতুন ছেলেদের দেখতে লাগলাম ,একদিন ও আমাদের বলল কে কানু মজুমদার মনুমেন্ট এর সামনে এক নতুন দলের প্রতিষ্ঠা করবেন আমরা যাব কিনা ?ততদিনে আমরা ওর মুখ থেকেই জেনেছি চারু মজুমদার , জঙ্গল সাঁওতাল , সরোজ দত্ত দের নাম , গেলাম ওর সঙ্গে ,সাক্ষী হয়ে থাকলাম সেই ঐতিহাসিক মুহুর্তের , জন্ম হলো "মার্কসবাদী -লেনিনবাদী" পার্টির I কিন্তু ভীষণ গন্ডগোল হলো সেদিন -ইঁটের ঘায়ে আমার মাথা ফেটে গেল (এখনো দাগ টা আছে), কোনো রকমে বাড়ি পালিয়ে এলাম মাথায় ব্যান্ডেজ করে, বাড়িতে বললাম পড়ে গিয়ে মাথা ফেটেছে I
সমীর কিন্তু একেবারে অন্য ছেলে হয়ে গেল ওই ঘটনার পর ,কলেজে আসা আসতে আসতে বন্ধ করে দিল,শেষ যেদিন ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, কি রকম ভীত- সন্ত্রস্ত লাগছিল ওকে I ওর ব্যাগ এ আমি একটা পিস্তল দেখেছিলাম সেদিন ,ওই দেখিয়েছিল- বলেছিল, আমরা যেন ওর সঙ্গে দেখা না করি,ওকে পুলিশ খুজছে I

তারপর এলো সেই ভয়ংকর সময়,সত্তরের দশক,সমীর মুস্তাফি তখন ছাত্রনেতা হিসেবে প্রথম সারীর- একদিন কাগজে দেখলাম পুলিশে ধরা পড়েছে ও I অনেক ভেবে চিনতে একদিন গেলাম ওর বাড়িতে , ওর বাবা মা দুজনেই খুব ই স্নেহ করতেন আমাকে,ওর কথা জিগ্গেশ করতে ওর বাবা বললেন যে ওকে মিসা আইনে ধরা হয়েছে তাই ও বেল পাবেনা , শিগগির ই ওকে মাদ্রাস জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে I
অনেক , অনেক দিন পর দেখলাম ওকে I ওকে মানে সমীর কে,আমার ওকে চিনতে এক মিনিট ও লাগেনি - আশ্চর্য্য , এই প্রায় বত্রিশ বছর পরও আমি ওকে চিনতে পারছি এক মুহুর্তে কিন্তু ও পারছেনা I একটা এক্যাউন্ট খুলতে এসেছিল ও আমাদের ব্যাঙ্ক এ, আমি ওকে বলে দিচ্ছিলাম কি কি ডকুমেন্টস লাগবে এক্যাউন্ট খুলতে,ধব ধবে সাদা পাজামা -পাঞ্জাবি পরা ,গাড়ির চাবিটা আর দুটো মোবাইল আমার টেবিল এ রেখে ও শুনছিল আমার কথা , আর আমি ফিরে যাচ্ছিলাম অতীতে I একটা কথা আমার অনেক সময় মনে হয় , স্মৃতি এত দ্রুত , এমন ডিটেলে আমাদের কাছে কি করে ফিরে আসে এক লহমায়? আমরা তো কত কিছুই ভুলে যাই,স্মৃতির তো কোনদিন ভুল হয়না পুরনো কথা মনে করিয়ে দিতে I ওর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই কিন্তু স্মৃতি আমাকে ডিটেলে মনে করিয়ে দিচ্ছিল ওকে প্রথম দেখার দিন,তার পরবর্তী সময় এবং ওর সঙ্গে বিচ্ছিন্য হয়ে যাবার কথা I কিন্তু ও আমায় চিনতে পারছেনা কেন?
ষাট সালের মাঝামাঝি,আমরা সদ্য কলেজে ঢুকেছি,তখন এবং ঢুকেই যেটা করতে শুরু করলাম সেটা হলো রাজনীতি, আমাদের রাজনীতির হাতেখড়ি হলো ওই সময়,আমরা পড়তাম সিটি কলেজে , আমাদের রাজনীতির ক্লাস শ্রদ্ধ্যানন্দ পার্ক এ ,বড় বড় নেতারা যখন আমাদের "কমরেড" বলে সম্মোধন করতেন ,কি যে আলোড়ন হত শরীরে তা লিখে বোঝানো যাবেনা , এই রকম একটা ক্লাস এই আমার প্রথম আলাপ সমীর এর সাথে I আমার ই বয়েসী একটা ছেলে,একমুখভর্তি পাতলা দাড়ি,মোটা ফ্রেমের চশমা,পাজামা পাঞ্জাবি পরা , কাঁধে একটা ঝোলা, প্রথম দেখে পেছনপাকা বলে মনে হলেও ভুলটা ভাঙ্গলো একটু পরেই,নেতা বললেন যে ওর নাম সমীর মুস্তাফি ,পড়ে সেন্ট পলস কলেজে, ওই আমাদের ক্লাস নেবে আজ I আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনলাম ওর বক্তব্য I আজ ও মনে পড়ে মার্ক্সিজিম নিয়ে ওর সেই বিশ্লেষণ , এত ভালো বিশ্লেষণ পরবর্তী জীবনে আর কারো কাছে শুনিনি I ব্যাস সমীর কে আমাদের ভালো লেগে গেল , ও আমাদের কলেজেই বেশিরভাগ সময় থাকত , ওর মুখেই প্রথম শুনি , হেই সামালো ধান , জীবনানন্দের কবিতা , নিজেও দারুন কবিতা লিখত ও,"আমার সকাল হারিয়ে গাছে হাজার রাতের ভিড়ে", তখন ও যে কথাগুলো বলত এখনো তা আমার কানে বাজছে I কিন্তু ও চিনতে পারছেনা কেন আমায়?ওর দু একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়েই আমি আবার স্মৃতির খপ্পরে....