এরপর আমার সঙ্গে ওর দেখা হয়েছিল আঠাত্তর সালের মাঝামাঝি I কিছুদিন আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে,বলল প্রথম দিকে প্রচন্ড মারধর করেছিল , পরের দিকে গা সওয়া হয়ে গেছিল,ওর মুখে পুলিশী নির্যাতনের কথা শুনে আমি আঁতকে উঠেছিলাম,ও কিন্তু হাসছিল I সেটাই ছিল আমার সঙ্গে সমীর এর শেষ দেখা I
আজ এই দু হাজার নয় সালে আবার সেই সমীর . আমার সামনে বসে , আমায় চিনতে পারছেনা I আমার একটা কার্ড দিলাম ওকে , বললাম কোনো দরকার হলে আমায় ফোন করবেন, কার্ড টা দেখল ও,আমার চোখের দিকে সরাসরি তাকালো, একটু যেন হাসিওর চোখে? বলল-বাসু ?আমি হাঁ বলাতে বলল - আমাকে কি চিনতে পেরেছিস?
বললাম -চিনতে তো প্রথম দেখাতেই পেরেছি , কিন্তু তুই আমাকে চিনতে পারছিস না দেখে কিছু বলিনি I লক্ষ্য করে দেখলাম যে ওর হাতে চারটে আংটি, আমাকে জিগ্গেশ করতে হলো না , ওই বলল - আমি এখন কলকাতার খুব নামী লোকরে বসু, সমীর মুস্তাফি মারা গেছে ,আমি এখন আচার্য্য ভার্গভ I তোর বাঙ্কের পাশের নামী সোনার দোকানটায় বসব সপ্তায় দু দিন , সেই ডিল তাই final করতে এসেছিলাম , টা ওখানে বসলে পাশের ব্যাঙ্কে একটা একাউন্ট তো খুলতেই হয় , কি বলিস ? ডিল final হয়ে গেল , সামনের সপ্তাহ থেকে দু দিন বসব সপ্তাহে I আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না ,আমার স্বপ্নের নায়ক , এক সময়ের বিখ্যাত নেতা সমীর মুস্তাফি-সে কিনা এখনকার বিখ্যাত জ্যোতিষী আচার্য্য ভার্গভ ?
আমার মনের কথাটা বুঝতে সমীর মুস্তফির বেশি সময় লাগলো না I বলল -খুব একটা তফাত আছে বলে তোর মনে হয় ? দুটোই তো স্বপ্ন বেচা ? সেই সময় আমাদের স্বপ্ন বেচেছিল কএকজন মানুষ ,সেই স্বপ্ন টা আমরা বেচতে পারিনি --আমাদের ব্যর্থতা - কিন্তু এই স্বপ্ন টা কিনতে লোকে সকাল থেকে নাম লেখায় I
টেবিল থেকে গাড়ির চাবি,মোবাইল দুটো তুলে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে চলে গেল সমীর মুস্তাফি-না ভুল বললাম --আচার্য্য ভার্গাভ
Thursday, March 18, 2010
সমীর কে - শেষ দেখা
প্রি- ইউ পাস করলাম কোনো রকমে,ও কিন্তু বেশ ভালো ভাবে পাস করে এসে ভর্তি হলো আমাদের কলেজে , ব্যাস আর আমাদের পায় কে?আমরা কজন সব সময় ওরসঙ্গে I কফি হাউস , ময়দান সব জায়গায় আমরা এক সঙ্গে , ওর এক প্রেমিকা ও ছিল, থাকাটাই স্বাভাবিক ছিল , অসম্ভব মেধাসম্পন্ন একটি মেয়ে যে পড়াশোনায় অত্যন্ত ভালো ছিল , কিন্তু তাকে ও সময় ই দিতে পারত না , তবে আমাদের সঙ্গে আলাপ ছিল নীলার I কিন্তু সময় পাল্টাতে লাগলো দ্রুত সেই সঙ্গে সমীর ও. মাত্র এক বা দেড় বছরের মধ্যে রাজনীতিতে এলো নতুন জোয়ার , সমীর এর সঙ্গে অনেক নতুন ছেলেদের দেখতে লাগলাম ,একদিন ও আমাদের বলল কে কানু মজুমদার মনুমেন্ট এর সামনে এক নতুন দলের প্রতিষ্ঠা করবেন আমরা যাব কিনা ?ততদিনে আমরা ওর মুখ থেকেই জেনেছি চারু মজুমদার , জঙ্গল সাঁওতাল , সরোজ দত্ত দের নাম , গেলাম ওর সঙ্গে ,সাক্ষী হয়ে থাকলাম সেই ঐতিহাসিক মুহুর্তের , জন্ম হলো "মার্কসবাদী -লেনিনবাদী" পার্টির I কিন্তু ভীষণ গন্ডগোল হলো সেদিন -ইঁটের ঘায়ে আমার মাথা ফেটে গেল (এখনো দাগ টা আছে), কোনো রকমে বাড়ি পালিয়ে এলাম মাথায় ব্যান্ডেজ করে, বাড়িতে বললাম পড়ে গিয়ে মাথা ফেটেছে I
সমীর কিন্তু একেবারে অন্য ছেলে হয়ে গেল ওই ঘটনার পর ,কলেজে আসা আসতে আসতে বন্ধ করে দিল,শেষ যেদিন ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, কি রকম ভীত- সন্ত্রস্ত লাগছিল ওকে I ওর ব্যাগ এ আমি একটা পিস্তল দেখেছিলাম সেদিন ,ওই দেখিয়েছিল- বলেছিল, আমরা যেন ওর সঙ্গে দেখা না করি,ওকে পুলিশ খুজছে I
তারপর এলো সেই ভয়ংকর সময়,সত্তরের দশক,সমীর মুস্তাফি তখন ছাত্রনেতা হিসেবে প্রথম সারীর- একদিন কাগজে দেখলাম পুলিশে ধরা পড়েছে ও I অনেক ভেবে চিনতে একদিন গেলাম ওর বাড়িতে , ওর বাবা মা দুজনেই খুব ই স্নেহ করতেন আমাকে,ওর কথা জিগ্গেশ করতে ওর বাবা বললেন যে ওকে মিসা আইনে ধরা হয়েছে তাই ও বেল পাবেনা , শিগগির ই ওকে মাদ্রাস জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে I
সমীর কিন্তু একেবারে অন্য ছেলে হয়ে গেল ওই ঘটনার পর ,কলেজে আসা আসতে আসতে বন্ধ করে দিল,শেষ যেদিন ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, কি রকম ভীত- সন্ত্রস্ত লাগছিল ওকে I ওর ব্যাগ এ আমি একটা পিস্তল দেখেছিলাম সেদিন ,ওই দেখিয়েছিল- বলেছিল, আমরা যেন ওর সঙ্গে দেখা না করি,ওকে পুলিশ খুজছে I
তারপর এলো সেই ভয়ংকর সময়,সত্তরের দশক,সমীর মুস্তাফি তখন ছাত্রনেতা হিসেবে প্রথম সারীর- একদিন কাগজে দেখলাম পুলিশে ধরা পড়েছে ও I অনেক ভেবে চিনতে একদিন গেলাম ওর বাড়িতে , ওর বাবা মা দুজনেই খুব ই স্নেহ করতেন আমাকে,ওর কথা জিগ্গেশ করতে ওর বাবা বললেন যে ওকে মিসা আইনে ধরা হয়েছে তাই ও বেল পাবেনা , শিগগির ই ওকে মাদ্রাস জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে I
অনেক , অনেক দিন পর দেখলাম ওকে I ওকে মানে সমীর কে,আমার ওকে চিনতে এক মিনিট ও লাগেনি - আশ্চর্য্য , এই প্রায় বত্রিশ বছর পরও আমি ওকে চিনতে পারছি এক মুহুর্তে কিন্তু ও পারছেনা I একটা এক্যাউন্ট খুলতে এসেছিল ও আমাদের ব্যাঙ্ক এ, আমি ওকে বলে দিচ্ছিলাম কি কি ডকুমেন্টস লাগবে এক্যাউন্ট খুলতে,ধব ধবে সাদা পাজামা -পাঞ্জাবি পরা ,গাড়ির চাবিটা আর দুটো মোবাইল আমার টেবিল এ রেখে ও শুনছিল আমার কথা , আর আমি ফিরে যাচ্ছিলাম অতীতে I একটা কথা আমার অনেক সময় মনে হয় , স্মৃতি এত দ্রুত , এমন ডিটেলে আমাদের কাছে কি করে ফিরে আসে এক লহমায়? আমরা তো কত কিছুই ভুলে যাই,স্মৃতির তো কোনদিন ভুল হয়না পুরনো কথা মনে করিয়ে দিতে I ওর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই কিন্তু স্মৃতি আমাকে ডিটেলে মনে করিয়ে দিচ্ছিল ওকে প্রথম দেখার দিন,তার পরবর্তী সময় এবং ওর সঙ্গে বিচ্ছিন্য হয়ে যাবার কথা I কিন্তু ও আমায় চিনতে পারছেনা কেন?
ষাট সালের মাঝামাঝি,আমরা সদ্য কলেজে ঢুকেছি,তখন এবং ঢুকেই যেটা করতে শুরু করলাম সেটা হলো রাজনীতি, আমাদের রাজনীতির হাতেখড়ি হলো ওই সময়,আমরা পড়তাম সিটি কলেজে , আমাদের রাজনীতির ক্লাস শ্রদ্ধ্যানন্দ পার্ক এ ,বড় বড় নেতারা যখন আমাদের "কমরেড" বলে সম্মোধন করতেন ,কি যে আলোড়ন হত শরীরে তা লিখে বোঝানো যাবেনা , এই রকম একটা ক্লাস এই আমার প্রথম আলাপ সমীর এর সাথে I আমার ই বয়েসী একটা ছেলে,একমুখভর্তি পাতলা দাড়ি,মোটা ফ্রেমের চশমা,পাজামা পাঞ্জাবি পরা , কাঁধে একটা ঝোলা, প্রথম দেখে পেছনপাকা বলে মনে হলেও ভুলটা ভাঙ্গলো একটু পরেই,নেতা বললেন যে ওর নাম সমীর মুস্তাফি ,পড়ে সেন্ট পলস কলেজে, ওই আমাদের ক্লাস নেবে আজ I আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনলাম ওর বক্তব্য I আজ ও মনে পড়ে মার্ক্সিজিম নিয়ে ওর সেই বিশ্লেষণ , এত ভালো বিশ্লেষণ পরবর্তী জীবনে আর কারো কাছে শুনিনি I ব্যাস সমীর কে আমাদের ভালো লেগে গেল , ও আমাদের কলেজেই বেশিরভাগ সময় থাকত , ওর মুখেই প্রথম শুনি , হেই সামালো ধান , জীবনানন্দের কবিতা , নিজেও দারুন কবিতা লিখত ও,"আমার সকাল হারিয়ে গাছে হাজার রাতের ভিড়ে", তখন ও যে কথাগুলো বলত এখনো তা আমার কানে বাজছে I কিন্তু ও চিনতে পারছেনা কেন আমায়?ওর দু একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়েই আমি আবার স্মৃতির খপ্পরে....
ষাট সালের মাঝামাঝি,আমরা সদ্য কলেজে ঢুকেছি,তখন এবং ঢুকেই যেটা করতে শুরু করলাম সেটা হলো রাজনীতি, আমাদের রাজনীতির হাতেখড়ি হলো ওই সময়,আমরা পড়তাম সিটি কলেজে , আমাদের রাজনীতির ক্লাস শ্রদ্ধ্যানন্দ পার্ক এ ,বড় বড় নেতারা যখন আমাদের "কমরেড" বলে সম্মোধন করতেন ,কি যে আলোড়ন হত শরীরে তা লিখে বোঝানো যাবেনা , এই রকম একটা ক্লাস এই আমার প্রথম আলাপ সমীর এর সাথে I আমার ই বয়েসী একটা ছেলে,একমুখভর্তি পাতলা দাড়ি,মোটা ফ্রেমের চশমা,পাজামা পাঞ্জাবি পরা , কাঁধে একটা ঝোলা, প্রথম দেখে পেছনপাকা বলে মনে হলেও ভুলটা ভাঙ্গলো একটু পরেই,নেতা বললেন যে ওর নাম সমীর মুস্তাফি ,পড়ে সেন্ট পলস কলেজে, ওই আমাদের ক্লাস নেবে আজ I আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনলাম ওর বক্তব্য I আজ ও মনে পড়ে মার্ক্সিজিম নিয়ে ওর সেই বিশ্লেষণ , এত ভালো বিশ্লেষণ পরবর্তী জীবনে আর কারো কাছে শুনিনি I ব্যাস সমীর কে আমাদের ভালো লেগে গেল , ও আমাদের কলেজেই বেশিরভাগ সময় থাকত , ওর মুখেই প্রথম শুনি , হেই সামালো ধান , জীবনানন্দের কবিতা , নিজেও দারুন কবিতা লিখত ও,"আমার সকাল হারিয়ে গাছে হাজার রাতের ভিড়ে", তখন ও যে কথাগুলো বলত এখনো তা আমার কানে বাজছে I কিন্তু ও চিনতে পারছেনা কেন আমায়?ওর দু একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়েই আমি আবার স্মৃতির খপ্পরে....
Subscribe to:
Posts (Atom)