Thursday, March 18, 2010

অনেক , অনেক দিন পর দেখলাম ওকে I ওকে মানে সমীর কে,আমার ওকে চিনতে এক মিনিট ও লাগেনি - আশ্চর্য্য , এই প্রায় বত্রিশ বছর পরও আমি ওকে চিনতে পারছি এক মুহুর্তে কিন্তু ও পারছেনা I একটা এক্যাউন্ট খুলতে এসেছিল ও আমাদের ব্যাঙ্ক এ, আমি ওকে বলে দিচ্ছিলাম কি কি ডকুমেন্টস লাগবে এক্যাউন্ট খুলতে,ধব ধবে সাদা পাজামা -পাঞ্জাবি পরা ,গাড়ির চাবিটা আর দুটো মোবাইল আমার টেবিল এ রেখে ও শুনছিল আমার কথা , আর আমি ফিরে যাচ্ছিলাম অতীতে I একটা কথা আমার অনেক সময় মনে হয় , স্মৃতি এত দ্রুত , এমন ডিটেলে আমাদের কাছে কি করে ফিরে আসে এক লহমায়? আমরা তো কত কিছুই ভুলে যাই,স্মৃতির তো কোনদিন ভুল হয়না পুরনো কথা মনে করিয়ে দিতে I ওর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই কিন্তু স্মৃতি আমাকে ডিটেলে মনে করিয়ে দিচ্ছিল ওকে প্রথম দেখার দিন,তার পরবর্তী সময় এবং ওর সঙ্গে বিচ্ছিন্য হয়ে যাবার কথা I কিন্তু ও আমায় চিনতে পারছেনা কেন?
ষাট সালের মাঝামাঝি,আমরা সদ্য কলেজে ঢুকেছি,তখন এবং ঢুকেই যেটা করতে শুরু করলাম সেটা হলো রাজনীতি, আমাদের রাজনীতির হাতেখড়ি হলো ওই সময়,আমরা পড়তাম সিটি কলেজে , আমাদের রাজনীতির ক্লাস শ্রদ্ধ্যানন্দ পার্ক এ ,বড় বড় নেতারা যখন আমাদের "কমরেড" বলে সম্মোধন করতেন ,কি যে আলোড়ন হত শরীরে তা লিখে বোঝানো যাবেনা , এই রকম একটা ক্লাস এই আমার প্রথম আলাপ সমীর এর সাথে I আমার ই বয়েসী একটা ছেলে,একমুখভর্তি পাতলা দাড়ি,মোটা ফ্রেমের চশমা,পাজামা পাঞ্জাবি পরা , কাঁধে একটা ঝোলা, প্রথম দেখে পেছনপাকা বলে মনে হলেও ভুলটা ভাঙ্গলো একটু পরেই,নেতা বললেন যে ওর নাম সমীর মুস্তাফি ,পড়ে সেন্ট পলস কলেজে, ওই আমাদের ক্লাস নেবে আজ I আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনলাম ওর বক্তব্য I আজ ও মনে পড়ে মার্ক্সিজিম নিয়ে ওর সেই বিশ্লেষণ , এত ভালো বিশ্লেষণ পরবর্তী জীবনে আর কারো কাছে শুনিনি I ব্যাস সমীর কে আমাদের ভালো লেগে গেল , ও আমাদের কলেজেই বেশিরভাগ সময় থাকত , ওর মুখেই প্রথম শুনি , হেই সামালো ধান , জীবনানন্দের কবিতা , নিজেও দারুন কবিতা লিখত ও,"আমার সকাল হারিয়ে গাছে হাজার রাতের ভিড়ে", তখন ও যে কথাগুলো বলত এখনো তা আমার কানে বাজছে I কিন্তু ও চিনতে পারছেনা কেন আমায়?ওর দু একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়েই আমি আবার স্মৃতির খপ্পরে....

No comments:

Post a Comment